মিশু দাশ : দেশের বিভিন্ন এলাকায় সয়াবিন তেলের চরম সংকট। শহরের অলিগলির দোকানগুলোতে সয়াবিন তেলের হাহাকার চলছে। গ্রামগঞ্জের বাজারগুলোতেও একই অবস্থা। সরকার নির্ধারিত ১৭৫ টাকার সয়াবিন তেল কোথাও কোথাও ২০০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল কিনতে প্রায় ৫০ টাকার মতো বাড়তি গুণতে হচ্ছে। খুচরা বিক্রিতাদের অভিযোগ, কোম্পানিগুলো সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে না। বড় বাজারের খুচরা বিক্রেতারও বলছেন, হাতেগোনা দুই একটি কোম্পানির সয়াবিন তেল পাচ্ছেন তারা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গায়ের রেটে সয়াবিন তেলের বোতল কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। আবার কোনো কোনো কোম্পানি সয়াবিন তেলের সঙ্গে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে অপ্রচলিত পণ্য ধরিয়ে দিচ্ছে। সরকার তেল সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে আসবে বললেও বাজারে তাদের কথার কোনো কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে না। বুধবার (৫ মার্চ) রাজধানীর একাধিক বাজার, বিভিন্ন এলাকার খুচরা দোকান ও ঢাকার বাইরে কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে। শেওড়াপাড়ার এক মোদি দোকানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এক লিটার তেল এখন ২০০ টাকা, দুই লিটার ৪০০ টাকা ও তিন লিটার ৫৭৫ টাকায় বিক্রি করছি। তেলে সেভাবে লাভ থাকে না। আর ৫০ হাজার টাকার তেল কিনলে মাত্র ২০০ টাকা লাভ থাকে। তেল পাচ্ছিও না, আবার লাভও দেয় না। কিনে পোষায় না, না কিনেও পারি না। একদিকে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে হবে। আবার গায়ের রেট থেকে বেশি দামেও বিক্রি করা যায় না। তেল নিয়ে আমরা বিক্রেতারা আছি উভয় সংকটে। মহাখালীর বাউবাজারের মিতু এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মিজানুর রহমান বলেন, কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে তেল কিনতে হলে এখন সঙ্গে করে আটা ময়দা, চিনি, লবণ কিনতে হয়। যখন যে পণ্য কম চলে তেলের সঙ্গে কোম্পানির ওই পণ্যটি ধরিয়ে দেয়। নইলে তেল দেয় না। বাজারে বসুন্ধরার তেল নেই অনেকদিন। রোজার দুই তিন মাস আগে থেকেই বসুন্ধরার তেল নেই। তিনি বলেন, এক লিটার তেলের গায়ের রেট ১৭৫ টাকা, আমাদের কিনতেও হয় ১৭৫ টাকা দিয়ে। পরে বাধ্য হয়েই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়। সেনা ৫ লিটারের বোতল ৮৫০ টাকা করে কিনেছি। ১০ কার্টন কিনেছি ৩৪ হাজার টাকা। এক টাকাও কম রাখেনি। এখন বিক্রি করতে হবে গায়ের রেট থেকে বেশি। ৮৬০ থেকে ৮৭০ টাকা বিক্রি করতে হবে। এদিকে ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়েও সয়াবিন তেলের সংকট রয়েছে। ওই এলাকার একজন মুদি দোকানদার সুমন বলেন, বাজারে তেলের সংকট আগের মতোই রয়েছে। সব কোম্পানি তেল দেয় না। একমাত্র ফ্রেশ কোম্পানি তাদের পিউর ব্রান্ডের এক লিটারের তেল দেয় মাঝেমধ্য। তিনি বলেন, গায়ের রেটে যে দাম লেখা রয়েছে তার চেয়ে বেশি দামে আমাদের তেল কিনতে হচ্ছে। কোম্পানি মেমোতে বিক্রিমূল্য ১৭৪ টাকা লিখলেও তারা ১৭৮ টাকা করে আদায় করে। সঙ্গে আটা, ময়দা ও অন্যান্য পণ্য কিনতে হয়। আমরা ১৯০ থেকে ২০০ টাকা লিটারে তেল বিক্রি করি। বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়াই যায় না। জানতে চাইলে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা বলেন, আমরা খুচরা বিক্রি করি না। আমরা পাইকারিতে বিক্রি করি। পাইকারিতে ৮০০ টাকা মণ কমেছে। এবং পাম তেল সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে লিটারে ১৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। সারা বাংলাদেশে কোটি কোটি খুচরা ব্যবসায়ী আছে, তাদের দেখভাল তো আমি করতে পারব না! সেটা সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দেখবে। তবে বোতলজাত তেল আমাদের আওতায় পড়ে না। যারা উৎপাদন করে, রিফাইন করে, তাদের পরিবেশক রয়েছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সিটি, টিকে গ্রুপ, মেঘনা- এসব গ্রুপ দেশের চাহিদা মেটাতো তো পারেই, টিসিবিকেও এরা বোতলজাত তেল দিচ্ছে। টিসিবি ভর্তুকি রেটে তেল বিক্রি করে, এ জন্য বোতলজাত তেল হয়তো একটু শর্ট। তবে খোলা সয়াবিন তেলের সংকট নেই। জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, সংকট কাটানোর চেষ্টা হলে তো সংকট কাটবে। সরকার তেলের সংকট কাটাতে কি ধরণের পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা এখনও দৃশ্যমাণ নয়। সঠিকভাবে মনিটরিং হচ্ছে না। আবার টিসিবির জন্য তেল কিনছে লোকাল মার্কেট থেকে। অথচ এই তেল আনার কথা ছিল দেশের বাইরে থেকে। টিসিবির জন্য খোলাবাজার থেকে তেল কেনায় বোতলজাত বাজারে বোতলজাত তেলের সংকট হচ্ছে। কোম্পানির লোক বলছে তারা তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রেখেছে। কোম্পানি ও ডিলারসহ সব পক্ষকে নিয়ে সরকারের বসা উচিত ছিল, সেটি হয়নি। বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেছিলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। সেটি এক মাস হয়ে গেলেও তেলের সংকট কাটেনি।
শিরোনাম:
অলিগলির দোকানগুলোতে সয়াবিন তেলের জন্য চলছে হাহাকার
-
মিশু দাশ
- আপডেট: ০৬:৩৮:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫
- 12
সর্বাধিক পঠিত