Dhaka ০৩:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দাঁতমারায় জমজমাট তক্ষকের ব্যবসা, জড়িত ইউপি যুবলীগের একটি সিন্ডিকেট

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:১৫:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ জুন ২০২৩
  • 3581

চট্টগ্রাম ব্যুরো : দাঁতমারায় জমজমাটভাবে চলছে তক্ষকের ব্যবসা। জানা গেছে এই তক্ষকের ব্যবসায় জড়িত রয়েছে দাঁতমারা ইউনিয়ন যুবলীগের শীর্ষ পদে থাকা একটি সিন্ডিকেট। চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় তক্ষককে বলা হয়ে থাকে টোট্টেং। তক্ষক ধরে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে একদল লোকচক্ষুর আড়ালে ছুটছে দাঁতমারায়।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নে তক্ষক বেচাকেনা হয়। এই ব্যবসার সাথে জড়িত আছে দাঁতমারায় প্রভাবশালী ইউনিয়ন যুবলীগের শীর্ষ পদে থাকা একটি সিন্ডিকেট যার সাথে রয়েছে একজন বিনা ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।

জানা গেছে দাঁতমারা ইউনিয়নের বনাঞ্চল থেকেই বেশিরভাগ তক্ষক ধরা হয়ে থাকে। ফলে দাঁতমারা ইউনিয়নের সক্রিয় তক্ষক পাচারকারীরা। সেখানে বিভিন্ন এলাকায় তক্ষক পাচারকারীরা স্থানীয়দের কোটি টাকার লোভ দেখায়। তাদের বলা হয়, একেকটি তক্ষকের মূল্য কোটি টাকা। এভাবে দেশের বাইরে পাচার এবং পাচারকারীদের হাতে থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ায় ২০ হাজারেরও বেশি তক্ষক হারিয়ে গেছে। অথচ বন্য প্রাণী আইন ২০১২ এর ৩২ ধারা মতে তক্ষকজাতীয় প্রাণী ধরা ও পাচার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ব্যবসা করতে গিয়ে ২০১১ সালে দালালের খপ্পরে পড়ে নিহত হন রূপক নন্দী নামে এক ব্যক্তি। তার বাড়ি ফটিকছড়ির ভূজপুর থানার নারায়ণহাট এলাকার নন্দীপাড়ায়।

তক্ষকের ব্যবসা ঘিরে দাঁতমারা ইউনিয়নে বাড়ছে অপরাধের ঘটনা। গত ২ জুন তক্ষক বিক্রির কথা বলে চট্টগ্রাম শহরের এক ব্যসায়ীকে শান্তিরহাট নিয়ে গিয়ে তার কাছ থেকে মুক্তিপন হিসেবে ২ লাখ টাকা আদায় করেন যুবলীগের শীর্ষ পদে থাকা সিন্ডিকেটটি। এসময় তাকে ভূজপুর থানার ভয় দেখানো হয়। থানা পুলিশের ভয়ে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীকে জানান। এছাড়ারও তক্ষক পাচার নিয়ে বিরোধের জের ধরে ঘটছে খুনের ঘটনাও ঘটেছে। ঘটছে মাদকের বিস্তারও। লোভে পড়ে অনেক মাদক ব্যবসায়ীও তক্ষক ব্যবসায় নেমে পড়েছে। গত ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর তক্ষক ব্যবসার সূত্র ধরে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির দাঁতমারা এলাকায় এনে খুন করা হয় ঢাকার এনজিও সেতু বন্ধনের ম্যানেজার হেলাল উদ্দিনকে। কোটি টাকা দামের কথিত তক্ষক কম দামে বিক্রির লোভ দেখিয়ে ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর ঢাকার এনজিও সেতু বন্ধনের ম্যানেজার হেলাল উদ্দিনকে (৪৩) কৌশলে ফটিকছড়ির দাঁতমারা ইউনিয়নে আনা হয়। এরপর তাকে অপহরণ করে একটি চক্র। পরে তক্ষকের দাম নিয়ে ওই চক্রের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তাকে এক পর্যায়ে হত্যা করা হয়। ওই এনজিও কর্মকর্তার লাশ গুম করতে সেটি ফেলে দেওয়া হয় ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুরের নির্জন পাহাড়ি এলাকার ৫০ ফুট গভীর এক গর্তে। তক্ষক কিনতে আসা এনজিও কর্মকর্তার লাশ গুম করতে সেটি ফেলে দেওয়া হয় নির্জন পাহাড়ি এলাকার ৫০ ফুট গভীর এক গর্তে। এক বছর পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর হাতে দুই অপহরণকারী গ্রেপ্তার হওয়ার পর লাশ গুমের সেই জায়গা খুঁজে বের করেন পিবিআই কর্মকর্তারা।

গত ১৯ নভেম্বর ৫০ ফুট গভীর সেই গর্ত খুঁড়ে এনজিও কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের গলিত দেহ উদ্ধার করা হয়। উত্তর ফটিকছড়ির দাঁতমারা এলাকায় পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কোনো কোনো সময় অভিযান চললেও তক্ষক পাচারে তা তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কয়েকজনকে আটকের পাশাপাশি শতাধিক তক্ষক উদ্ধার করলেও এরই মধ্যে অনেক জনপদ তক্ষকশূন্য হয়ে পড়েছে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

দাঁতমারায় জমজমাট তক্ষকের ব্যবসা, জড়িত ইউপি যুবলীগের একটি সিন্ডিকেট

Update Time : ০৭:১৫:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ জুন ২০২৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো : দাঁতমারায় জমজমাটভাবে চলছে তক্ষকের ব্যবসা। জানা গেছে এই তক্ষকের ব্যবসায় জড়িত রয়েছে দাঁতমারা ইউনিয়ন যুবলীগের শীর্ষ পদে থাকা একটি সিন্ডিকেট। চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় তক্ষককে বলা হয়ে থাকে টোট্টেং। তক্ষক ধরে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে একদল লোকচক্ষুর আড়ালে ছুটছে দাঁতমারায়।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নে তক্ষক বেচাকেনা হয়। এই ব্যবসার সাথে জড়িত আছে দাঁতমারায় প্রভাবশালী ইউনিয়ন যুবলীগের শীর্ষ পদে থাকা একটি সিন্ডিকেট যার সাথে রয়েছে একজন বিনা ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।

জানা গেছে দাঁতমারা ইউনিয়নের বনাঞ্চল থেকেই বেশিরভাগ তক্ষক ধরা হয়ে থাকে। ফলে দাঁতমারা ইউনিয়নের সক্রিয় তক্ষক পাচারকারীরা। সেখানে বিভিন্ন এলাকায় তক্ষক পাচারকারীরা স্থানীয়দের কোটি টাকার লোভ দেখায়। তাদের বলা হয়, একেকটি তক্ষকের মূল্য কোটি টাকা। এভাবে দেশের বাইরে পাচার এবং পাচারকারীদের হাতে থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ায় ২০ হাজারেরও বেশি তক্ষক হারিয়ে গেছে। অথচ বন্য প্রাণী আইন ২০১২ এর ৩২ ধারা মতে তক্ষকজাতীয় প্রাণী ধরা ও পাচার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ব্যবসা করতে গিয়ে ২০১১ সালে দালালের খপ্পরে পড়ে নিহত হন রূপক নন্দী নামে এক ব্যক্তি। তার বাড়ি ফটিকছড়ির ভূজপুর থানার নারায়ণহাট এলাকার নন্দীপাড়ায়।

তক্ষকের ব্যবসা ঘিরে দাঁতমারা ইউনিয়নে বাড়ছে অপরাধের ঘটনা। গত ২ জুন তক্ষক বিক্রির কথা বলে চট্টগ্রাম শহরের এক ব্যসায়ীকে শান্তিরহাট নিয়ে গিয়ে তার কাছ থেকে মুক্তিপন হিসেবে ২ লাখ টাকা আদায় করেন যুবলীগের শীর্ষ পদে থাকা সিন্ডিকেটটি। এসময় তাকে ভূজপুর থানার ভয় দেখানো হয়। থানা পুলিশের ভয়ে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীকে জানান। এছাড়ারও তক্ষক পাচার নিয়ে বিরোধের জের ধরে ঘটছে খুনের ঘটনাও ঘটেছে। ঘটছে মাদকের বিস্তারও। লোভে পড়ে অনেক মাদক ব্যবসায়ীও তক্ষক ব্যবসায় নেমে পড়েছে। গত ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর তক্ষক ব্যবসার সূত্র ধরে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির দাঁতমারা এলাকায় এনে খুন করা হয় ঢাকার এনজিও সেতু বন্ধনের ম্যানেজার হেলাল উদ্দিনকে। কোটি টাকা দামের কথিত তক্ষক কম দামে বিক্রির লোভ দেখিয়ে ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর ঢাকার এনজিও সেতু বন্ধনের ম্যানেজার হেলাল উদ্দিনকে (৪৩) কৌশলে ফটিকছড়ির দাঁতমারা ইউনিয়নে আনা হয়। এরপর তাকে অপহরণ করে একটি চক্র। পরে তক্ষকের দাম নিয়ে ওই চক্রের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তাকে এক পর্যায়ে হত্যা করা হয়। ওই এনজিও কর্মকর্তার লাশ গুম করতে সেটি ফেলে দেওয়া হয় ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুরের নির্জন পাহাড়ি এলাকার ৫০ ফুট গভীর এক গর্তে। তক্ষক কিনতে আসা এনজিও কর্মকর্তার লাশ গুম করতে সেটি ফেলে দেওয়া হয় নির্জন পাহাড়ি এলাকার ৫০ ফুট গভীর এক গর্তে। এক বছর পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর হাতে দুই অপহরণকারী গ্রেপ্তার হওয়ার পর লাশ গুমের সেই জায়গা খুঁজে বের করেন পিবিআই কর্মকর্তারা।

গত ১৯ নভেম্বর ৫০ ফুট গভীর সেই গর্ত খুঁড়ে এনজিও কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের গলিত দেহ উদ্ধার করা হয়। উত্তর ফটিকছড়ির দাঁতমারা এলাকায় পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কোনো কোনো সময় অভিযান চললেও তক্ষক পাচারে তা তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কয়েকজনকে আটকের পাশাপাশি শতাধিক তক্ষক উদ্ধার করলেও এরই মধ্যে অনেক জনপদ তক্ষকশূন্য হয়ে পড়েছে।