০৬:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিন্ডিকেটের কবজায় সৌদি আরবের বিমান টিকিট, দাম লাগামহীন

লিটন তালুকদার, সৌদি আরব ব্যুরো : কিছু ট্রাভেল এজেন্টের একটি চক্রের সিন্ডিকেটের কবজায় বিমানের টিকিট বাণিজ্য। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের যাত্রীরা স্বাভাবিক ভাড়ার তিন গুণ পর্যন্ত বেশি টাকা দিয়ে টিকিট কিনতে হচ্ছে। লাগামহীনভাবে টিকিটের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী, কর্মী ও সাধারণ ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায়ীরা। খোজ নিয়ে জানাগেছে, এয়ারলাইনস গুলোর টিকিট আগাম ব্লক করে নিজেদের জিম্মায় রেখে পরে ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে। ফলে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার টিকিট তাদের সিন্ডিকেটের কারণে কিনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিভিন্ন সূত্র বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইনস ব্যবসায়ী ও দেশীয় কিছু ট্রাভেল এজেন্সির মধ্যে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। তারা বিভিন্ন এজেন্সির চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও যাত্রীদের কোনো প্রকার পাসপোর্ট, ভিসা ও ভ্রমণ নথিপত্র ছাড়াই শুধু ই-মেইলের মাধ্যমে কিছু এয়ারলাইনসের বিভিন্ন রুটের গ্রুপ সিট বুকিং করে থাকে। এই সিন্ডিকেট দু-তিন মাস আগে অগ্রিম তারিখের পিএনআর তৈরি করে সিট ব্লক করে রাখে। কিন্তু এই পিএনআরে কোনো যাত্রীর নাম উল্লেখ থাকে না। এজেন্সি বা যাত্রীর ওই ফ্লাইটের টিকিট খালি আছে কি না তা জানার কোনো সুযোগ থাকে না। কিন্তু টিকিট খুঁজতে গেলে সেখানে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে—এমন তথ্য ও বার্তা আসে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মূলত বিদেশি মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইনসগুলো ফ্লাইটের তারিখের অনেক আগেই আসন বিক্রি নিশ্চিত করা এবং অধিক মুনাফার জন্যই এই পদ্ধতি অবলম্বন করে রিয়াদ, দাম্মাম, জেদ্দা, ওমান, দোহাসহ বিভিন্ন রুটের সিট ব্লক করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইনসগুলো এ ধরনের নাম ছাড়া গ্রুপ বুকিং করে তাদের পছন্দের গুটিকয়েক এজেন্সির মাধ্যমে বাজারে টিকিট বিক্রি করে।
সুত্র জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে সৌদি আরবে যখন কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় তখন সিন্ডিকেট গ্রুপ টিকিট অর্থাৎ নাম, পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া এয়ারলাইনসগুলো থেকে টিকিট ব্লক করে রাখে। তখন ফ্লাইটের টিকিট বিক্রি না হলেও ব্লক করার কারণে ভাড়া বেশি হয়ে যায়। মধ্যপ্রাচ্যে যেসব এয়ারলাইনস ফ্লাইট পরিচালনার কাজ করে তারাই হলো সিন্ডিকেট। এই এয়ারলাইনসগুলো চায় বাংলাদেশ থেকে বেশি লাভ করতে। সাম্প্রতিক সময়ে টিকিটের দাম লাগামহীন হওয়াতে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি অভিযোগ দিয়ে আসছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি টিকিটের দাম সহনীয় রাখতে মন্ত্রণালয় থেকে এয়ারলাইনসগুলোকে নির্দেশনা দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বেবিচককে চিঠি দেয়া হয়। পরে ভাড়া সহনীয় রাখতে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এর আগে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর সংগঠন এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশও (আটাব) উড়োজাহাজ ভাড়া সহনীয় রাখার অনুরোধ জানিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। আটাব জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেশি বেড়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাড়া বেড়েছে জেদ্দা, মদিনা, রিয়াদ ও দাম্মাম রুটে। এসব গন্তব্যে ভাড়া বাড়লে সংশ্লিষ্ট অন্য গন্তব্যগুলোতেও এয়ারলাইন্সগুলো ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। সামগ্রিকভাবে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ এবং কিছু ক্ষেত্রে আরও বেশি বেড়েছে। কিছুদিন আগেও যে টিকিটের দাম ৪০ হাজার ছিল এখন সেটি ৮০ হাজারের বেশি। ট্রাভেল এজেন্টরা বলছেন, ৫ থেকে ৭ শতাংশ দাম বাড়লে সেটি স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। কিন্তু ৪০-৫০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি বাড়লে অস্বাভাবিক হয়ে যায়। বেশি দাম দিয়েও অনেকে টিকিট পাচ্ছে না। তাই সমাধানের জন্য যারা টিকিট নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে কৃত্রিম সংকট দেখাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি ফ্লাইট ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। ক্যাপাসিটি বাড়লে টিকিটও সহজলভ্য হবে, দামও কমবে। এদিকে বেবিচক বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করা বিদেশি ২৪টি এয়ারলাইন্সকে ভাড়া সহনীয় রাখার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলেছেন, বাংলাদেশে উড়োজাহাজের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে প্রায়ই জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিশেষ করে বছরের যে সময়ে যাত্রীদের যাতায়াত বৃদ্ধি পায়, সে সময়ে বিমান ভাড়া বাড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আমরা এয়ারলাইন্সগুলোর পরিচালন ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। চিঠিতে বলা হয়, উড়োজাহাজের ভাড়া ভ্রমণকারীদের সাধ্যের মধ্যে রাখাটা তাদের যেমন স্বস্তি ও আস্থা দেবে, সেই সঙ্গে টেকসই এভিয়েশন খাত গড়ে উঠতে সাহায্য করবে এবং এতে আকাশপথে ভ্রমণ আরও বাড়বে। এজন্য এয়ারলাইন্সগুলোকে তাদের ভাড়ার তালিকা পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।

সর্বাধিক পঠিত

ফটিকছড়িন ধর্মপুরে পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

সিন্ডিকেটের কবজায় সৌদি আরবের বিমান টিকিট, দাম লাগামহীন

আপডেট: ০৩:৪২:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

লিটন তালুকদার, সৌদি আরব ব্যুরো : কিছু ট্রাভেল এজেন্টের একটি চক্রের সিন্ডিকেটের কবজায় বিমানের টিকিট বাণিজ্য। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের যাত্রীরা স্বাভাবিক ভাড়ার তিন গুণ পর্যন্ত বেশি টাকা দিয়ে টিকিট কিনতে হচ্ছে। লাগামহীনভাবে টিকিটের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী, কর্মী ও সাধারণ ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায়ীরা। খোজ নিয়ে জানাগেছে, এয়ারলাইনস গুলোর টিকিট আগাম ব্লক করে নিজেদের জিম্মায় রেখে পরে ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে। ফলে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার টিকিট তাদের সিন্ডিকেটের কারণে কিনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিভিন্ন সূত্র বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইনস ব্যবসায়ী ও দেশীয় কিছু ট্রাভেল এজেন্সির মধ্যে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। তারা বিভিন্ন এজেন্সির চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও যাত্রীদের কোনো প্রকার পাসপোর্ট, ভিসা ও ভ্রমণ নথিপত্র ছাড়াই শুধু ই-মেইলের মাধ্যমে কিছু এয়ারলাইনসের বিভিন্ন রুটের গ্রুপ সিট বুকিং করে থাকে। এই সিন্ডিকেট দু-তিন মাস আগে অগ্রিম তারিখের পিএনআর তৈরি করে সিট ব্লক করে রাখে। কিন্তু এই পিএনআরে কোনো যাত্রীর নাম উল্লেখ থাকে না। এজেন্সি বা যাত্রীর ওই ফ্লাইটের টিকিট খালি আছে কি না তা জানার কোনো সুযোগ থাকে না। কিন্তু টিকিট খুঁজতে গেলে সেখানে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে—এমন তথ্য ও বার্তা আসে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মূলত বিদেশি মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইনসগুলো ফ্লাইটের তারিখের অনেক আগেই আসন বিক্রি নিশ্চিত করা এবং অধিক মুনাফার জন্যই এই পদ্ধতি অবলম্বন করে রিয়াদ, দাম্মাম, জেদ্দা, ওমান, দোহাসহ বিভিন্ন রুটের সিট ব্লক করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইনসগুলো এ ধরনের নাম ছাড়া গ্রুপ বুকিং করে তাদের পছন্দের গুটিকয়েক এজেন্সির মাধ্যমে বাজারে টিকিট বিক্রি করে।
সুত্র জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে সৌদি আরবে যখন কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় তখন সিন্ডিকেট গ্রুপ টিকিট অর্থাৎ নাম, পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া এয়ারলাইনসগুলো থেকে টিকিট ব্লক করে রাখে। তখন ফ্লাইটের টিকিট বিক্রি না হলেও ব্লক করার কারণে ভাড়া বেশি হয়ে যায়। মধ্যপ্রাচ্যে যেসব এয়ারলাইনস ফ্লাইট পরিচালনার কাজ করে তারাই হলো সিন্ডিকেট। এই এয়ারলাইনসগুলো চায় বাংলাদেশ থেকে বেশি লাভ করতে। সাম্প্রতিক সময়ে টিকিটের দাম লাগামহীন হওয়াতে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি অভিযোগ দিয়ে আসছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি টিকিটের দাম সহনীয় রাখতে মন্ত্রণালয় থেকে এয়ারলাইনসগুলোকে নির্দেশনা দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বেবিচককে চিঠি দেয়া হয়। পরে ভাড়া সহনীয় রাখতে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এর আগে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর সংগঠন এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশও (আটাব) উড়োজাহাজ ভাড়া সহনীয় রাখার অনুরোধ জানিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। আটাব জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেশি বেড়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাড়া বেড়েছে জেদ্দা, মদিনা, রিয়াদ ও দাম্মাম রুটে। এসব গন্তব্যে ভাড়া বাড়লে সংশ্লিষ্ট অন্য গন্তব্যগুলোতেও এয়ারলাইন্সগুলো ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। সামগ্রিকভাবে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ এবং কিছু ক্ষেত্রে আরও বেশি বেড়েছে। কিছুদিন আগেও যে টিকিটের দাম ৪০ হাজার ছিল এখন সেটি ৮০ হাজারের বেশি। ট্রাভেল এজেন্টরা বলছেন, ৫ থেকে ৭ শতাংশ দাম বাড়লে সেটি স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। কিন্তু ৪০-৫০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি বাড়লে অস্বাভাবিক হয়ে যায়। বেশি দাম দিয়েও অনেকে টিকিট পাচ্ছে না। তাই সমাধানের জন্য যারা টিকিট নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে কৃত্রিম সংকট দেখাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি ফ্লাইট ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। ক্যাপাসিটি বাড়লে টিকিটও সহজলভ্য হবে, দামও কমবে। এদিকে বেবিচক বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করা বিদেশি ২৪টি এয়ারলাইন্সকে ভাড়া সহনীয় রাখার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলেছেন, বাংলাদেশে উড়োজাহাজের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে প্রায়ই জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিশেষ করে বছরের যে সময়ে যাত্রীদের যাতায়াত বৃদ্ধি পায়, সে সময়ে বিমান ভাড়া বাড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আমরা এয়ারলাইন্সগুলোর পরিচালন ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। চিঠিতে বলা হয়, উড়োজাহাজের ভাড়া ভ্রমণকারীদের সাধ্যের মধ্যে রাখাটা তাদের যেমন স্বস্তি ও আস্থা দেবে, সেই সঙ্গে টেকসই এভিয়েশন খাত গড়ে উঠতে সাহায্য করবে এবং এতে আকাশপথে ভ্রমণ আরও বাড়বে। এজন্য এয়ারলাইন্সগুলোকে তাদের ভাড়ার তালিকা পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।