চট্টগ্রাম ব্যুরো : হালদা নদীতে পুরোদমে ডিম ছেড়েছে মা মাছেরা। গত ১৭ জুন শনিবার থেকে মানিকছড়ি ও ফটিকছড়ি উপজেলায় বৃষ্টিপাতের কারণে এতে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামে হালদা নদীতে। ঢল নামতেই ডিম ছাড়ে মা মাছেরা।
গত ১৮ জুন রোববার রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত জোয়ার ও ভাটার সময় মা মাছেরা নদীর অন্তত ১০টি স্থানে ডিম ছাড়ে। ডিম আহরণকারীরা একেকটি নৌকায় ৫০ কেজির ওপরে ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন।
হালদা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৫ বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। এবার প্রচণ্ড দাবদাহ ও ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে হালদা নদীতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ডিম ছাড়তে দেরি হয়।
রোববার দুপুর থেকে সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত নদীর হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের রামদাসমুন্সিরহাট, মাছুয়াঘোনা ও আমতুয়া, নাপিতের ঘাট, পোড়া কপালী, গড়দোয়ারা ইউনিয়নের নয়াহাট, রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট, কাগতিয়া ও খলিফারঘোনা এলাকায় অন্তত ৩০০টি নৌকায় জেলেরা ডিম সংগ্রহ করেছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ অ্যান্ড ল্যাবরেটরি সূত্রে জানা যায়, প্রজনন মৌসুমের শুরুতে হালদা নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল প্রতি লিটারে সাড়ে ৩ হাজার মিলিগ্রাম, যা স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে ২০ থেকে ৩০ মিলিগ্রাম। তবে গত ২০ দিনের বজ্রবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সে লবণাক্ততা কমে এসেছে। গত বছর মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ছিল সাড়ে ৬ হাজার কেজি। এর আগে ২০২১ সালে ৮ হাজার ৫০০ কেজি।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, মা মাছের ডিম ছাড়া নিয়ে এতে আমরা শঙ্কিত ছিলাম। পুরো মৌসুমে ডিম ছাড়ার পরিমাণ খুব কম ছিল। তবে গতকাল রাত সাড়ে ১১টা থেকে নদীর প্রায় ২০টি স্থানে প্রচুর পরিমাণ ডিম ছাড়া শুরু হয়। এবার বেশ দেরি করেই ডিম ছাড়া শুরু করেছিল কার্পজাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ) মা মাছেরা। অন্যান্যবার এপ্রিলের শুরু ও মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে চার থেকে পাঁচবার ডিম ছাড়ে মা মাছ।
জালুবায়ু পরিবর্তন সহ নানা কারণে গত কয়েক বছর ধরে কম ডিম ছাড়ছে মা মাছ।