Dhaka ১১:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বন্যায় দুই ভাইসহ পাঁচজনের মৃত্যু

  • Reporter Name
  • Update Time : ১১:৫১:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪
  • 15

শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় বয়াবহ বন্যায় আরও দুই ভাইসহ গত দুদিনে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ৫ অক্টোবর শনিবার বিকেলে উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের কুতুবাকুড়া গ্রাম থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গত শুক্রবার দুপুরের দিকে তারা দুজন পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ ছিলেন। সর্বশেষ মারা যাওয়া দুজন হলেন- উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের অভয়পুর গ্রামের মৃত বাছির উদ্দিনের ছেলে হাতেম আলী (৩০) ও আলমগীর হোসেন (১৬)। এর আগে গত শুক্রবার মারা যান তিনজন। নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন শামীম জানান, গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে অভয়পুর গ্রামে বন্যার পানির স্রোতে পড়ে যায় আলমগীর। এ সময় ছোট ভাইকে বাঁচাতে গেলে হাতেম আলীও স্রোতে ভেসে যান। এরপর থেকেই তারা নিখোঁজ ছিলেন। শনিবার বিকেল ৪টার দিকে পাশের এলাকা কুতুবাকুড়া গ্রামে পানিতে দুই ভাইয়ের মরদেহ ভেসে ওঠে। গত ৪ অক্টোবর শুক্রবার যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে তারা হলেন- নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবীল ইউনিয়নের ইদ্রিস আলী (৬৫), পোড়াগাঁও ইউনিয়নের জহুরা খাতুন (৭০) ও বাঘবেড় ইউনিয়নের অমিজা খাতুন (৪৫)। নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ রানা জানান, বন্যায় শুক্রবার তিনজন এবং শনিবার দুজনের মৃত্যু হয়েছে। শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও নালিতাবাড়ী উপজেলায় পানি বেড়েছে। এতে শনিবার (৫ অক্টোবর) নতুন করে কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত নালিতাবাড়ীর বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ২২ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়াও নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার অন্তত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যায় বিভিন্ন জায়গায় সড়ক ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট। আক্রান্ত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত হয়েছেন সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরাও। একইসঙ্গে ভারতের উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ১৯ ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম। এর মধ্যে ঝিনাইগাতী উপজেলার ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়ন, মালিঝিকান্দা ও নলকুড়া ইউনিয়ন এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী ইউনিয়ন, নয়াবীল, পোড়াগাঁও, বাঘবেড়, রামচন্দ্রকুড়া, কলসপাড়, মরিচপুরান, নালিতাবাড়ী, রাজনগর, রূপনারায়নকুড়া, যোগানিয়া, কাকরকান্দি সবকটি ইউনিয়নের গ্রামগুলো বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও মৎস্য খাতে। এদিকে জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বন্যায় জেলায় সাত হাজার ১২ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ সম্পূর্ণ ও ৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ আংশিকভাবে পানিতে ডুবে রয়েছে। এছাড়া তলিয়ে গেছে ৯০০ হেক্টর জমির শীতকালীন শাক-সবজি। ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রাজীবুল ইসলাম জানান, বন্যায় ঝিানাইগাতীর ৭টি ইউনিয়নের অন্তত ১৫ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। প্রায় সাড়ে ৩০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে শনিবার সকাল থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ঘরবাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান পাঁচজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নালিতাবাড়ীতে এখনও উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। দুর্গত এলাকাগুলোতে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তার কার্যক্রম চলমান আছে।

Tag :

রাষ্ট্রপতির বাসভবনের সামনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার চেষ্টা

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বন্যায় দুই ভাইসহ পাঁচজনের মৃত্যু

Update Time : ১১:৫১:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪

শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় বয়াবহ বন্যায় আরও দুই ভাইসহ গত দুদিনে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ৫ অক্টোবর শনিবার বিকেলে উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের কুতুবাকুড়া গ্রাম থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গত শুক্রবার দুপুরের দিকে তারা দুজন পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ ছিলেন। সর্বশেষ মারা যাওয়া দুজন হলেন- উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের অভয়পুর গ্রামের মৃত বাছির উদ্দিনের ছেলে হাতেম আলী (৩০) ও আলমগীর হোসেন (১৬)। এর আগে গত শুক্রবার মারা যান তিনজন। নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন শামীম জানান, গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে অভয়পুর গ্রামে বন্যার পানির স্রোতে পড়ে যায় আলমগীর। এ সময় ছোট ভাইকে বাঁচাতে গেলে হাতেম আলীও স্রোতে ভেসে যান। এরপর থেকেই তারা নিখোঁজ ছিলেন। শনিবার বিকেল ৪টার দিকে পাশের এলাকা কুতুবাকুড়া গ্রামে পানিতে দুই ভাইয়ের মরদেহ ভেসে ওঠে। গত ৪ অক্টোবর শুক্রবার যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে তারা হলেন- নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবীল ইউনিয়নের ইদ্রিস আলী (৬৫), পোড়াগাঁও ইউনিয়নের জহুরা খাতুন (৭০) ও বাঘবেড় ইউনিয়নের অমিজা খাতুন (৪৫)। নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ রানা জানান, বন্যায় শুক্রবার তিনজন এবং শনিবার দুজনের মৃত্যু হয়েছে। শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও নালিতাবাড়ী উপজেলায় পানি বেড়েছে। এতে শনিবার (৫ অক্টোবর) নতুন করে কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত নালিতাবাড়ীর বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ২২ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়াও নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার অন্তত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যায় বিভিন্ন জায়গায় সড়ক ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট। আক্রান্ত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত হয়েছেন সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরাও। একইসঙ্গে ভারতের উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ১৯ ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম। এর মধ্যে ঝিনাইগাতী উপজেলার ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়ন, মালিঝিকান্দা ও নলকুড়া ইউনিয়ন এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী ইউনিয়ন, নয়াবীল, পোড়াগাঁও, বাঘবেড়, রামচন্দ্রকুড়া, কলসপাড়, মরিচপুরান, নালিতাবাড়ী, রাজনগর, রূপনারায়নকুড়া, যোগানিয়া, কাকরকান্দি সবকটি ইউনিয়নের গ্রামগুলো বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও মৎস্য খাতে। এদিকে জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বন্যায় জেলায় সাত হাজার ১২ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ সম্পূর্ণ ও ৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ আংশিকভাবে পানিতে ডুবে রয়েছে। এছাড়া তলিয়ে গেছে ৯০০ হেক্টর জমির শীতকালীন শাক-সবজি। ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রাজীবুল ইসলাম জানান, বন্যায় ঝিানাইগাতীর ৭টি ইউনিয়নের অন্তত ১৫ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। প্রায় সাড়ে ৩০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে শনিবার সকাল থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ঘরবাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান পাঁচজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নালিতাবাড়ীতে এখনও উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। দুর্গত এলাকাগুলোতে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তার কার্যক্রম চলমান আছে।