আহসান হাবিব, পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ২০২৩ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি পাসের পর আশপাসের বিদ্যালয়ে আসন খালি না থাকায় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী এখনো ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারেনি। ভর্তি হতে না পারা শিশু শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার আশংকা। জানা যায় নতুন শিক্ষানীতির কারণে প্রতিটি বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ৫৫ জনের অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমতি নাই। এছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকার বিদ্যালয়গুলো এখনো ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে শাখা খোলা হয়নি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ জনান বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে একশ থেকে দেড়শ জন ছাত্র-ছাত্রী আবেদন করেন। পরবর্তীতে লটারির মাধ্যমে ৫৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে বিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ পেয়েছে। বাকী ৮০- থেকে ৯০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হতে পারেনি। এদের মধ্যে কিছু সংখ্যক খোঁজখবর নিয়ে পাশবর্তী ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু সেইসব বিদ্যালয়েও আসন খালি না থাকায় গ্রামের অনেক ছাত্র-ছাত্রী এখনো ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারেনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায় তেঁতুলিয়া উপজেলার সাহেবজোট, পুরাতন বাজার, দর্জিপাড়া, সারিয়াল জোত, ডাঙ্গাপাড়া, মাথা ফাটা, আজিজ নগর, কোম্পানি জোত, বিরালী জোত, বুড়িমুটকি রনচন্ডী সীমান্ত এলাকার গরিব পাথর শ্রমিক, দিনমজুর ও কৃষকের অনেক ছেলে-মেয়ে যারা ৫ম শ্রেণি পাস করেছে কিন্তু এখনো বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনি। এলাকার আশপাশের দশ কিলোমিটারের মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা থাকলেও সেসব প্রতিষ্ঠানেও আসন খালি নাই। এলাকার গরিব দিনমজুরদের ছেলে-মেয়েদের বাহিরে রেখে পড়াশুনা করার মত অর্থনৈতিক সমর্থ্য নাই।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার সরেজমিন গিয়ে কথা হয়, আজিজ নগর গ্রামের শিশু শিক্ষার্থী সুলতানা রাজিয়া, রাবেয়া আক্তার,আইমা আক্তার, চম্পা, ইমন ও মাহমুদ হাসান সঙ্গে। শিশু ছাত্র-ছাত্রীরা জানান, আমরা পঞ্চম শ্রেণী পাসের পর আজিজনগর দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও তেঁতুলিয়া মডেল পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করি। সেখানে লটারিতে আমাদের নাম না উঠায় বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারিনি। আশেপাশের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে বিদ্যালয়ে কোন আসন খালি না থাকায় ভর্তি হতে পারছি না। এই শিশু শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন তবে কি আমাদের লেখাপড়া থমকে যাবে? আমরা কি বিদ্যালয়ের অভাবে ভর্তি হতে পারব না? পড়াশুনা করতে চাই এমন সব প্রশ্ন এখন শিশু ছাত্র-ছাত্রীদের মুখে মুখে।
আজিজনগর গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ বলেন, আমার নাতনী আয়েশা আক্তার সুইটি আজিজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে ৫ম শ্রেণী পাস করেছে। লটারিতে নাম না উঠায় তাকে কোন স্কুলে ভর্তি করাতে পারিনি। চা শ্রমিক সাহেরা বলেন, আমার ছেলে সাব্বির হোসেন আজিজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণী পাস করেছে; লটারিতে নাম না উঠায় তাকে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করাতে পারিনি। আমার সাধ্য নাই যে ছেলেকে বাহিরে রেখে পড়াশুনা করাবো। মাথা ফাটা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য সেতারা বেগম বলেন, ছেলে-মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে না পারায় চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছি। এখনো বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারে ছেলে-মেয়েরা বাড়িতে কান্নাকাটি করে। স্কুলে যেতে চাই, পড়তে চাই, আমরা এখন কোথায় পড়াবো। ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আনোয়ারা মুখে শোনা গেলে একই কথা, তিনিও ৫ম শ্রেণি পাসের পর শিশু কন্যাকে কোন স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করাতে পারেনি।
অভিভাবকদের দাবি স্থানীয় স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে শাখা খুলে ছেলে মেয়েদের পড়া লেখার ব্যবস্থা করে দেয়া হোক। ভুক্তভোগী অভিভাবকরা ছেলে-মেয়েদের ভর্তির জন্য ইতোমধ্যে পঞ্চগড় এক আসনের এমপি সহ প্রশাসক ও শিক্ষা অফিসার বরাবরে আবেদন জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে আজিজনগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সানোয়ার হোসেনের বলেন, সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ৫৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করেছি। আমার স্কুলে ১৫১ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি আবেদন করেছিল। তাদের মধ্যে লটারিতে যাদের নাম উঠেছে। ভর্তি করেছি। তবে সরকারি ভাবে নির্দেশনা পেলে যারা ভর্তি হতে পারেনি তাদের ভর্তি করা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ফজলে রাব্বী বলেন, এলাকার অনেক অভিভাবক ছেলে-মেয়েকে বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করাতে না পারে আমার কাছে এসেছিল।
এবিষয়ে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোন উপায়ে স্কুলে ভর্তির জন্য চেষ্টা করছি।
জেলা শিক্ষা অফিসার, পঞ্চগড়, মোহাম্মদ সাইফুল মালেক বলেন, আমার জানামতে জেলার অনেক স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী ২৫ থেকে ৩০ জন ভর্তি হয়েছে তারা ছাত্র-ছাত্রী পাচ্ছে না। সেখানে তেঁতুলিয়া উপজেলায় বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনি বা ১০ কিলোমিটার এর মধ্যে কোন স্কুলে আসন ফাঁকা নেই এটা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। তবে বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে জানতে পারেন।