Dhaka ০২:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জয়পুরহাটে বারোমাসী তরমুজ চাষে ব্যাপক সফলতা

মোফাজ্জল হোসেন, জয়পুরহাট প্রতিনিধি : খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত শস্যভান্ডার জয়পুরহাট জেলায় এখন বিদেশী জাতের বারোমাসী তরমুজ চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে এখানকার চাষীরা। কম খরচে অধিক লাভ আর বারোমাসী এর ফলন হওয়ায় এ তরমুজ চাষে ঝুকে পরছে অনেক চাষী। মাত্র ৪০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল ও কুড়ি আসে আর ৭০ থেকে ৮০ দিনের পরিপক্ক হয়ে মাচায় ডগায় ডগায় ঝুলে পড়ে এ তরমুজ। ভিতরে লাল, হলুদ রং এর তরমুজ, রসালো আর খেতে মিষ্টি ও খুব সু-স্বাদ হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তরমুজ চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তরমুজ চাষের জন্য প্রথমে মাচা, বেড, সুতা, বাঁশ সহ অন্যান্য খরচ হয় প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। আর তরমুজ বিক্রয় হয় ১ লাখ ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা এতে কৃষকের লাভ হয় প্রায় ১ লাখ টাকা মতো। একই মাচায় এরপর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ে তেমন কোন খরচ নেই শুধু বীজ ক্রয় করতে হয় এতে কৃষকের বেশ লাভ হয়।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় বারোমাসী তরমুজ চাষ হয়েছে ৪শ’ বিঘা। নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণের আওতায় তরমুজ ক্ষেতগুলোতে নেওয়া হয়েছে আর্গানিক ও মালচিং পদ্বতি। পোকামাড়ক দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়েলো কার্ড। এ জেলায় ব্যাপক বেবি, সুগার কিং, মধুমালা, তৃপ্তি, কালিয়া, গোল্ডেন ক্রাউন, ইয়েলো হানি, ইয়েলো বার্ড, রবি, বাংলালিংক, অনুভব, বেঙ্গল টাইগার জাতের তরমুজ চাষ হচ্ছে। প্রতিটি তরমুজের ওজন ২ থেকে ৪ কেজি। প্রতি কেজি তরমুজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও মান ভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। জেলার পাঁচবিবি উপজেলার আওলাই ইউনিয়নে সব চেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে। পাঁচবিবি উপজেলার ভাড়াহুত গ্রামের তরমুজ চাষী ও ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম জানান, আমি ২ বিঘা জমিতে তরমুজ করেছি। জমিতে বেড তৈরি করে মাটির সঠিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে রাখি। এরপর ১৮ ইঞ্চি পর পর বিদেশী জাতের গোল্ডেন ক্রাউন, ইয়েলো হানি, বø্যাক বেবি ও মধুমালা জাতের তরমুজের বীজ রোপণ করি। মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল ও কুড়ি আসে এরপর ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে পরিপক্ক হয়ে মাচায় ডগায় ডগায় ঝুলে পড়ে এ তরমুজ। ২ বিঘা জমিতে ১ম পর্যায়ে মোট খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। কিন্তু গাছ ভাল না হওয়ায় ফলন একটু কম পেয়েছি তারপরও সে তরমুজ বিক্রি করেছি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এতে লাভ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। ২য় পর্যায়ে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা আর তরমুজ বিক্রি করেছি ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা এতে লাভ হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তিনি আরো বলেন, আমি এখানকার তরমুজ পাইকারী কিনে বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী সহ ঢাকার ৭/৮টি বাজারে বিক্রি করে থাকি। ক্ষেতলাল উপজেলার কর্ণপাড়া গ্রামের তরমুজ চাষী কমল জানান, ৩৩ শতক জমিতে তরমুজ চাষে ১ম পর্যায়ে মোট ৪০ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ১লাখ ১০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। এতে তার খরচ বাদে লাভ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। আর ২য় পর্যায়ে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা আর তরমুজ বিক্রি করেছি ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা এতে লাভ হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। কালাই উপজেলার তরমুজ চাষি সাগর জানান, আমি ৮০ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এতে সব মিলিয়ে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। আর বিক্রি হবে ৩ লাখ টাকার বেশি। আমি ইয়েলো কিং, অনুভব ও ব্যাপক বেবি জাতের তরমুজ চাষ করেছি। পোকামাকড় রোধ করার জন্য তৈরি করেছি ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়েলো কার্ড। তরমুজের গাছের পরিচর্যার জন্য দেওয়া হয়েছে মালচিং পেপার। ওপরে মাচা দিয়ে ফল প্যাকেট জাত করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব জাতের তরমুজের ভেতরের অংশের রং হলুদ ও লাল হয় এবং খেতেও বেশ সুস্বাদু। মোফাজ্জল, বাবু, আলম, আহসান হাবীব, ইয়াকুব, মুনিরা সহ তরমুজ ক্ষেত দেখতে আসা একাধিক নতুন চাষীরা জানান, অসময়ে তরমুজ চাষ হচ্ছে এবং এর ফলনও ভাল, এছাড়াও এর স্বাদ ও গুনগতমান ভালও হাওয়ায় এখন অনেকেই আগ্রহ ভরে তরমুজ চাষের জন্য পরামর্শ নিতে আসছেন প্রতিদিন। অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ মোঃ মজিবুর রহমান জানান, জয়পুরহাটে চলতি মৌসুমে প্রায় ৪শ’ বিঘা জমিতে এবার মাচায় তরমুজ চাষ হয়েছে।

এ জেলায় কৃষকেরা ধান ও আলুর চাষ করতে বেশী অগ্রহী। ধান ও আলুর চাষ বাদে এ ধরণের ফল চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছে। তরমুজ চাষ করে বর্তমান তারা সফল হওয়ায় এ বারোমাসী তরমুজ চাষ নিয়ে এলাকার কৃষকের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এ দিকে বেসরকারী সংস্থা জাকস ফাউন্ডেশন ও এহেড সোশ্যাল অর্গানাইজেশন (এসো) এর সমন্বিত কৃষি ইউনিটে আওতায় এ জেলায় তরমুজ চাষে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

ঢাকা টু আগরতলা লংমার্চের ঘোষণা বিএনপির ৩ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন

জয়পুরহাটে বারোমাসী তরমুজ চাষে ব্যাপক সফলতা

Update Time : ০১:২০:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৩

মোফাজ্জল হোসেন, জয়পুরহাট প্রতিনিধি : খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত শস্যভান্ডার জয়পুরহাট জেলায় এখন বিদেশী জাতের বারোমাসী তরমুজ চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে এখানকার চাষীরা। কম খরচে অধিক লাভ আর বারোমাসী এর ফলন হওয়ায় এ তরমুজ চাষে ঝুকে পরছে অনেক চাষী। মাত্র ৪০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল ও কুড়ি আসে আর ৭০ থেকে ৮০ দিনের পরিপক্ক হয়ে মাচায় ডগায় ডগায় ঝুলে পড়ে এ তরমুজ। ভিতরে লাল, হলুদ রং এর তরমুজ, রসালো আর খেতে মিষ্টি ও খুব সু-স্বাদ হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তরমুজ চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তরমুজ চাষের জন্য প্রথমে মাচা, বেড, সুতা, বাঁশ সহ অন্যান্য খরচ হয় প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। আর তরমুজ বিক্রয় হয় ১ লাখ ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা এতে কৃষকের লাভ হয় প্রায় ১ লাখ টাকা মতো। একই মাচায় এরপর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ে তেমন কোন খরচ নেই শুধু বীজ ক্রয় করতে হয় এতে কৃষকের বেশ লাভ হয়।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় বারোমাসী তরমুজ চাষ হয়েছে ৪শ’ বিঘা। নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণের আওতায় তরমুজ ক্ষেতগুলোতে নেওয়া হয়েছে আর্গানিক ও মালচিং পদ্বতি। পোকামাড়ক দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়েলো কার্ড। এ জেলায় ব্যাপক বেবি, সুগার কিং, মধুমালা, তৃপ্তি, কালিয়া, গোল্ডেন ক্রাউন, ইয়েলো হানি, ইয়েলো বার্ড, রবি, বাংলালিংক, অনুভব, বেঙ্গল টাইগার জাতের তরমুজ চাষ হচ্ছে। প্রতিটি তরমুজের ওজন ২ থেকে ৪ কেজি। প্রতি কেজি তরমুজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও মান ভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। জেলার পাঁচবিবি উপজেলার আওলাই ইউনিয়নে সব চেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে। পাঁচবিবি উপজেলার ভাড়াহুত গ্রামের তরমুজ চাষী ও ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম জানান, আমি ২ বিঘা জমিতে তরমুজ করেছি। জমিতে বেড তৈরি করে মাটির সঠিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে রাখি। এরপর ১৮ ইঞ্চি পর পর বিদেশী জাতের গোল্ডেন ক্রাউন, ইয়েলো হানি, বø্যাক বেবি ও মধুমালা জাতের তরমুজের বীজ রোপণ করি। মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল ও কুড়ি আসে এরপর ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে পরিপক্ক হয়ে মাচায় ডগায় ডগায় ঝুলে পড়ে এ তরমুজ। ২ বিঘা জমিতে ১ম পর্যায়ে মোট খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। কিন্তু গাছ ভাল না হওয়ায় ফলন একটু কম পেয়েছি তারপরও সে তরমুজ বিক্রি করেছি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এতে লাভ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। ২য় পর্যায়ে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা আর তরমুজ বিক্রি করেছি ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা এতে লাভ হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তিনি আরো বলেন, আমি এখানকার তরমুজ পাইকারী কিনে বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী সহ ঢাকার ৭/৮টি বাজারে বিক্রি করে থাকি। ক্ষেতলাল উপজেলার কর্ণপাড়া গ্রামের তরমুজ চাষী কমল জানান, ৩৩ শতক জমিতে তরমুজ চাষে ১ম পর্যায়ে মোট ৪০ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ১লাখ ১০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। এতে তার খরচ বাদে লাভ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। আর ২য় পর্যায়ে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা আর তরমুজ বিক্রি করেছি ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা এতে লাভ হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। কালাই উপজেলার তরমুজ চাষি সাগর জানান, আমি ৮০ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এতে সব মিলিয়ে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। আর বিক্রি হবে ৩ লাখ টাকার বেশি। আমি ইয়েলো কিং, অনুভব ও ব্যাপক বেবি জাতের তরমুজ চাষ করেছি। পোকামাকড় রোধ করার জন্য তৈরি করেছি ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়েলো কার্ড। তরমুজের গাছের পরিচর্যার জন্য দেওয়া হয়েছে মালচিং পেপার। ওপরে মাচা দিয়ে ফল প্যাকেট জাত করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব জাতের তরমুজের ভেতরের অংশের রং হলুদ ও লাল হয় এবং খেতেও বেশ সুস্বাদু। মোফাজ্জল, বাবু, আলম, আহসান হাবীব, ইয়াকুব, মুনিরা সহ তরমুজ ক্ষেত দেখতে আসা একাধিক নতুন চাষীরা জানান, অসময়ে তরমুজ চাষ হচ্ছে এবং এর ফলনও ভাল, এছাড়াও এর স্বাদ ও গুনগতমান ভালও হাওয়ায় এখন অনেকেই আগ্রহ ভরে তরমুজ চাষের জন্য পরামর্শ নিতে আসছেন প্রতিদিন। অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ মোঃ মজিবুর রহমান জানান, জয়পুরহাটে চলতি মৌসুমে প্রায় ৪শ’ বিঘা জমিতে এবার মাচায় তরমুজ চাষ হয়েছে।

এ জেলায় কৃষকেরা ধান ও আলুর চাষ করতে বেশী অগ্রহী। ধান ও আলুর চাষ বাদে এ ধরণের ফল চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছে। তরমুজ চাষ করে বর্তমান তারা সফল হওয়ায় এ বারোমাসী তরমুজ চাষ নিয়ে এলাকার কৃষকের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এ দিকে বেসরকারী সংস্থা জাকস ফাউন্ডেশন ও এহেড সোশ্যাল অর্গানাইজেশন (এসো) এর সমন্বিত কৃষি ইউনিটে আওতায় এ জেলায় তরমুজ চাষে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।