সুব্রত শুভ্র : বিশাল ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যের জন্য নজর কেড়েছে ঢাকা শহর বনানীতে অবস্থিত পাঁচ তারকা হোটেল শেরাটন। দৃষ্টিনন্দন ভবন সুদৃশ্য স্থাপনার কারণে বিলাসবহুল পাঁচ তারকা শেরাটন হোটেল দেশী বিদেশী ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের মন জয় করে আসছে। এর ফলে রাজধানীর বনানী কামাল আতাতুর্ক এ অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শেরাটন হোটেল দেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রেখে যাচ্ছে। পাঁচ তারকা শেরাটন হোটেলে রয়েছে সুইমিংপুল, ব্যায়ামাগার, রেস্টুরেন্ট ও বলরুম। এ কারণেই বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে আসা বিদেশী ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের নজর কেড়েছে ও মন ছোঁয়েছে এই হোটেল।
সরকারি আইন-বিধিবিধান ও সব ধরনের প্রশাসনিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই রাজধানীর বনানীতে সিটি করপোরেশনের জমিতে পাঁচতারকা হোটেল শেরাটন নির্মাণ করেছে বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেড কোম্পানি। জানা গেছে, বনানীতে নির্মিত শেরাটন হোটেল ভবনটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও বোরাক রিয়েল এস্টেটের যৌথ মালিকানাধীন একটি প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের শুরুতেই যাবতীয় বিধিবিধান ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নির্মাণ ও শেয়ার বণ্টন করা হয়েছে। ২০০৪ সালে ডিসিসি আহূত প্রতিযোগিতামূলক সেরা প্রস্তাবের ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের পূর্ব-অনুমোদনক্রমে ২০০৬ সালে বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডকে লেটার অফ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে।
বুয়েট কর্তৃক ৩০তলা ভবনের স্ট্রাকচারাল নকশা ভেটিংয়ের পর নিয়ম অনুসারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অথরাইজড অফিসার (প্রধান প্রকৌশলী) তা অনুমোদন করেন। এরপর ৪৪ কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন ৬০ কাঠা জমিতে পুরনো ৪তলা ভবনের ওপরে বোরাক রিয়েল এস্টেট ভবনটি নির্মাণ করে। পরবর্তীকালে ২০২২ সালে বুয়েট পুনরায় ভবনটির অ্যাজবিল্ট আর্কিটেকচারাল ও স্ট্রাকচারাল নকশা ভেটিংয়ের পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। চুক্তিপত্রের শর্ত অনুযায়ী প্রকল্পটি সম্পূর্ণ কমন এরিয়ার মালিকানা সিটি করপোরেশন হওয়ায় প্রকৃতপক্ষে এর সমগ্র আয়তনের কম-বেশি ৫৫ শতাংশ (নেট ৩০%+কমন ২৫%) সিটি করপোরেশনের, যেখানে বোরাকের মালিকানা পুরো ভবনের ৪৫ শতাংশ। কিন্তু সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিকে অসম বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। প্রকৃতপক্ষে চুক্তিটি অসম নয় বলে জানিয়েছেন বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেড।
উল্লেখ্য, চুক্তিকালীন সমসাময়িক সময়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের অন্য সব প্রকল্পের শেয়ারের মালিকানা প্রকল্পের তুলনায় অনেক কম ছিল বলে জানিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ গুলশান ২-এর মতো মূল্যবান জায়গায় ঢাকা সিটি করপোরেশনের মালিকানা ২৫ শতাংশ। বোরাক রিয়েল এস্টেট তাদের প্রাপ্য শেয়ারের নিজ জায়গায় হোটেলটি স্থাপন করেছে যা ১২-২৮তলা পর্যন্ত অবিস্থত। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অংশ সংরক্ষিত রয়েছে যা ৪-১১তলা পর্যন্ত অবস্থিত। ডিএনসিসি এই সংরক্ষিত প্রাপ্য অংশ যে কোনো সময় বুঝে নিতে পারে। উল্লেখ্য, ডিএনসিসির প্রাপ্য অংশে শেরাটন হোটেলের কোনো কিছুই অবস্থিত নেই বলে জানান বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেড।
এদিকে বনানীতে হোটেল শেরাটন ভবনে সিটি করপোরেশনের হিস্যা বুঝে নেওয়ার নির্দেশ হাই কোর্ট। রাজধানীর বনানীতে ২৮ তলা যে ভবনে পাঁচ তারকা হোটেল বানানো হয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী সেই ভবনের হিস্যা বুঝে নিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। আগামী তিন মাসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদনও চেয়েছে উচ্চ আদালত। গতকাল ১২ জুন সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চে রুলসহ এ আদেশ দিয়েছে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, বোরাক রিয়েল এস্টেটসহ বিবাদীদের ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত ১ জুন দৈনিক প্রথম আলোতে সরকারি জমিতে পাঁচ তারকা হোটেল শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেখানে লেখা হয়, সিটি করপোরেশনের ৬০ কাঠা জায়গায় ২৮ তলা ভবন বানিয়ে একাই ভোগদখল করছে বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড। কিন্তু বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড জানিয়েছেন, ডিএনসিসির প্রাপ্য অংশে শেরাটনের কোনো কিছুই অবস্থিত নেই।