Dhaka ০৩:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চট্রগ্রামের হালদা নদী বৃষ্টি হলেও ডিম ছাড়ল না মা মাছ

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:০০:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ মে ২০২৩
  • 1788

মোঃ সিরাজুল মনির, চট্টগ্রাম ব্যুরো: আবহাওয়া অনুকূল থাকলে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে চৈত্র মাসের অমাবস্যা কিংবা পূর্ণিমা তিথিতে ডিম ছাড়ে মা মাছ। কিন্তু এ বছর চৈত্র মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়নি। ডিম আহরণকারীরা ধারণা করেছিলেন বৈশাখ মাসের কোনো এক তিথিতে হয়তো মাছ নদীতে ডিম ছাড়বে। কিন্তু বৈশাখের সব তিথি চলে গেলেও মা মাছের ডিম ছাড়ার কোন আলামত দেখা যায়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং নদীর পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ না পেয়ে বৈশাখ মাসেও ডিম ছাড়েনি মা মাছ। আগামী শুক্রবার অমাবস্যা তিথি। তিথির জো গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে। জো চলবে আগামী রোববার পর্যন্ত। জো শুরুর আগে গত সোমবার রাতে শুরু হয় বজ্রসহ বৃষ্টি। ঘূর্ণিঝড়ের রেশ না কাটতেই বজ্রসহ বৃষ্টিপাত দেখে ডিম আহরণকারীদের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় এবং পাহাড়ি ঢলের প্রকোপ না থাকায় মাছ ডিম ছাড়েনি। সোমবার রাতে বৃষ্টির আলামত দেখে আহরণকারীরা ডিম সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে নদীতে প্রস্তুত ছিলেন। কিছু সময় পর বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা নদী থেকে ফিরে আসেন। ডিম আহরণকারীরা জানান, পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢলের প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে। আর নদীর লবণাক্ততাও কমে যাবে। সে সময় অমাবস্যা তিথিতে মা মাছ ডিম ছাড়ার আশা করছেন তারা।

ডিম আহরণকারী গড়দুয়ারার নজরুল বলেন, গত সোমবার রাতে বজ্রসহ বৃষ্টির আলামত দেখে ডিম সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে নদী পাহারায় ছিলাম। কিন্তু পরিমিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং নদীতে লবণাক্ত পানি থাকায় মাছ ডিম ছাড়েনি। নদীতে স্পষ্ট লবণাক্ততা পরিলক্ষিত হচ্ছে। মধ্যম মাদার্শা এলাকার ডিম সংগ্রহকারী আশু বড়ুয়া বলেন, বৃষ্টি হয়েছে অনেক দিন পূর্বে। মা মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বজ্রসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের প্রয়োজন। যদি এই অমাবস্যা তিথি/জো’তেও মাছ ডিম না ছাড়ে তবে আগামী পূর্ণিমা তিথিতে বজ্রসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়ে নদীর লবণাক্ততা হ্রাস পেলে জুন মাসের জো/তিথিতে (১ থেকে ৬ জুন) নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া পরবর্তী অমাবস্যা তিথিতেও (১৫ থেকে ২০ জুন) মাছ ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম।

তিনি গণমাধ্যমকে জানান, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে লবণাক্ততাসহ অন্যান্য প্যারামিটারসমূহ আদর্শ মানের মধ্যে ফিরে আসলে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে হালদায় ডিম ছাড়বে কার্পজাতীয় মা মাছ।

হালদা নদী একটি গুরুত্বপূর্ণ জলজ বাস্তুতন্ত্র। এখানে রয়েছে ছোট–বড় ৯৩ প্রজাতির মাছ, চিংড়ি ও গাঙেয় ডলফিন। হালদা নদী রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশের অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র। প্রজনন মৌসুমে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন মাসের অমাবস্যা, অষ্টমী ও পূর্ণিমার তিথিতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতসহ পানির বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারের (পানির তাপমাত্রা, পানির স্রোত, পানির স্তর, তড়িৎ পরিবাহিতা, টারবিডিটি, দ্রবীভূত অঙিজেন, পিএইচ ইত্যাদি) মিথস্ক্রিয়ায় হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ঘটে।

Tag :

চট্টগ্রামের ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালানো যুবলীগ নেতা ফিরোজ গ্রেপ্তার

চট্রগ্রামের হালদা নদী বৃষ্টি হলেও ডিম ছাড়ল না মা মাছ

Update Time : ০৫:০০:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ মে ২০২৩

মোঃ সিরাজুল মনির, চট্টগ্রাম ব্যুরো: আবহাওয়া অনুকূল থাকলে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে চৈত্র মাসের অমাবস্যা কিংবা পূর্ণিমা তিথিতে ডিম ছাড়ে মা মাছ। কিন্তু এ বছর চৈত্র মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়নি। ডিম আহরণকারীরা ধারণা করেছিলেন বৈশাখ মাসের কোনো এক তিথিতে হয়তো মাছ নদীতে ডিম ছাড়বে। কিন্তু বৈশাখের সব তিথি চলে গেলেও মা মাছের ডিম ছাড়ার কোন আলামত দেখা যায়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং নদীর পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ না পেয়ে বৈশাখ মাসেও ডিম ছাড়েনি মা মাছ। আগামী শুক্রবার অমাবস্যা তিথি। তিথির জো গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে। জো চলবে আগামী রোববার পর্যন্ত। জো শুরুর আগে গত সোমবার রাতে শুরু হয় বজ্রসহ বৃষ্টি। ঘূর্ণিঝড়ের রেশ না কাটতেই বজ্রসহ বৃষ্টিপাত দেখে ডিম আহরণকারীদের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় এবং পাহাড়ি ঢলের প্রকোপ না থাকায় মাছ ডিম ছাড়েনি। সোমবার রাতে বৃষ্টির আলামত দেখে আহরণকারীরা ডিম সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে নদীতে প্রস্তুত ছিলেন। কিছু সময় পর বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা নদী থেকে ফিরে আসেন। ডিম আহরণকারীরা জানান, পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢলের প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে। আর নদীর লবণাক্ততাও কমে যাবে। সে সময় অমাবস্যা তিথিতে মা মাছ ডিম ছাড়ার আশা করছেন তারা।

ডিম আহরণকারী গড়দুয়ারার নজরুল বলেন, গত সোমবার রাতে বজ্রসহ বৃষ্টির আলামত দেখে ডিম সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে নদী পাহারায় ছিলাম। কিন্তু পরিমিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং নদীতে লবণাক্ত পানি থাকায় মাছ ডিম ছাড়েনি। নদীতে স্পষ্ট লবণাক্ততা পরিলক্ষিত হচ্ছে। মধ্যম মাদার্শা এলাকার ডিম সংগ্রহকারী আশু বড়ুয়া বলেন, বৃষ্টি হয়েছে অনেক দিন পূর্বে। মা মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বজ্রসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের প্রয়োজন। যদি এই অমাবস্যা তিথি/জো’তেও মাছ ডিম না ছাড়ে তবে আগামী পূর্ণিমা তিথিতে বজ্রসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়ে নদীর লবণাক্ততা হ্রাস পেলে জুন মাসের জো/তিথিতে (১ থেকে ৬ জুন) নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া পরবর্তী অমাবস্যা তিথিতেও (১৫ থেকে ২০ জুন) মাছ ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম।

তিনি গণমাধ্যমকে জানান, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে লবণাক্ততাসহ অন্যান্য প্যারামিটারসমূহ আদর্শ মানের মধ্যে ফিরে আসলে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে হালদায় ডিম ছাড়বে কার্পজাতীয় মা মাছ।

হালদা নদী একটি গুরুত্বপূর্ণ জলজ বাস্তুতন্ত্র। এখানে রয়েছে ছোট–বড় ৯৩ প্রজাতির মাছ, চিংড়ি ও গাঙেয় ডলফিন। হালদা নদী রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশের অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র। প্রজনন মৌসুমে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন মাসের অমাবস্যা, অষ্টমী ও পূর্ণিমার তিথিতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতসহ পানির বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারের (পানির তাপমাত্রা, পানির স্রোত, পানির স্তর, তড়িৎ পরিবাহিতা, টারবিডিটি, দ্রবীভূত অঙিজেন, পিএইচ ইত্যাদি) মিথস্ক্রিয়ায় হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ঘটে।