চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী ফটিকছড়ি উপজেলার হেঁয়াকো এলাকায় সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রায় ১৩০০ একর জমি দখল করে একটি বিশাল রাবার বাগান স্থাপনের অভিযোগ উঠেছে ২ নং দাঁতমারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মজিবুল হক মজুমদার এর বিরুদ্ধে। মজিবুল হক মজুমদার, যিনি মজু কোম্পানী নামে পরিচিত, মূলত অবৈধ রাবার চাষ–কেন্দ্রিক ব্যবসায় জড়িত। তাঁর প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির নাম মজুমদার রাবার বাগান। সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদনটি তৈরী করতে গিয়ে জানাগেছে, ফটিকছড়ি, মানিকছড়ি ও রামগড় এলাকাসহ প্রায় ১৩০০ একর জমি ব্যবহার করে সরকারী ও বেসরকারি জায়গা দখল করে তিনি একটি বিশাল রাবার বাগান গড়ে তুলেছেন, যা বর্তমানে ধারণা করা হচ্ছে প্রায় পাঁচশ কোটি টাকার মতো মূল্যবান। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতাসীন থাকার সময় দলের ছত্রছায়ায় থেকে তিনি ধাপে ধাপে এ জমিগুলো দখলে নেন। একদিকে সাধারণ মানুষ জমি হারিয়ে নিঃস্ব, অন্যদিকে বনাঞ্চল ধ্বংস করে পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির মুখে ফেলেছে তার এই রাবার চাষ প্রকল্প। সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, মজু কোম্পানির লোকজন প্রথমে স্থানীয়দের জমি কম দামে কেনার প্রস্তাব দেয়। কেউ রাজি না হলে ভয়ভীতি দেখিয়ে অথবা ভুয়া দলিলের মাধ্যমে জমি নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। অভিযোগ রয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি খাসজমি ও পাহাড়ি বনভূমিও জোরপূর্বক দখল করে নেওয়া হয়েছে। একজন ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিক বলেন, আমার দাদা-পরদাদা এই জমিতে কৃষি করতেন। এখন মজু কোম্পানির লোকজন বলে এটা ওদের রাবার বাগানের অংশ। পুলিশকে বললেও কিছু হয় না, সবাই বলে ‘ওরা উপরের মানুষ’। এব্যাপারে স্থানীয় পরিবেশবিদরা বলছেন, এভাবে একত্রে এত বড় পরিমাণ পাহাড়ি ও বনভূমি দখল করে রাবার চাষ করা জলবায়ু পরিবর্তন, পাহাড় ধস ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের ঝুঁকি বহন করে। বিশেষ করে যেসব জায়গায় আগে ঘন বন ছিল, এখন সেখানে প্লাস্টিকের ব্যাগ ঝুলানো রাবার গাছের সারি – যা প্রকৃতির উপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন বা বন বিভাগের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানা যায়। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালীদের চাপে অনেক সরকারি কর্মকর্তাই চুপ থেকে গেছেন বা মৌখিকভাবে অনুমোদন দিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন স্থানীয় সাংবাদিক জানান, আওয়ামীলীগ সরকার আমলে দলীয় পরিচয়ের জোরে মজু কোম্পানি যা ইচ্ছা তাই করে গেছে। এ নিয়ে প্রতিবেদন করতে গেলে চাপ আসে উপরে থেকে। ফটিকছড়ির হেঁয়াকোর এই জমি দখল ও রাবার বাগান স্থাপন শুধু একটি সাধারণ অনিয়ম নয়, বরং এটি ক্ষমতার অপব্যবহার, পরিবেশবিধ্বংস এবং সাধারণ মানুষের ভূমি অধিকার হরণের একটি ভয়াবহ উদাহরণ। এটি শুধু স্থানীয় নয়, জাতীয় পর্যায়ে তদন্ত ও বিচারের দাবি রাখে।
১০:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:










