১০:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শহীদ জিয়ার বহুদলীয় গণতন্ত্র তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক দর্শন

  • আপডেট: ০২:৩২:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
  • 144

নাসির উদ্দিন বিপ্লব (হায়দার‌) : দেশজুড়ে চলা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর গণহত্যা এবং রাজনৈতিক শূন্যতার মাঝে স্বাধীনতার ঘোষণাই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে উদ্দীপ্ত করেছিল বাংলাদেশের মানুষকে। মেজর জিয়ার মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততার বিষয়টি জানতে পারে দিশেহারা জাতি এবং নতুন করে আশায় বুক বেঁধে একতায় সংহত হতে উদ্বুদ্ধ হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের নিয়মিত সেনাবাহিনী গঠিত হওয়ার পর এর অন্যতম ব্রিগেড ‘জেড ফোর্স’র প্রধান হিসেবে ক্ষণজন্মা মেজর জিয়াউর রহমান নিজের সাহসিকতা ও সততায় মুগ্ধ করেছিলেন সবাইকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধে অবদানের কারণে তাকে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেয়া হয়। ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর, তৎকালীন রাজনীতি ও সেনাবাহিনীতে নানা অঘটন এবং চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে সিপাহি জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে ১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় আসেন জেনারেল জিয়া। বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা করেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। তার শাসনামলে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন আনার মধ্য দিয়ে গণমানুষের নেতা হয়ে ওঠেন জিয়া। যারা বাংলাদেশের ইতিহাসকে শুধু পৃষ্ঠা নয় স্পন্দনের মত পড়ে থাকেন, তাঁদের কাছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের (বীরউত্তম) নামটি এক অনিবার্য উচ্চারণ। ১৯৭৫-এর উত্তাল রাজনৈতিক পটভূমিতে জিয়াউর রহমান আবির্ভূত হন এক নির্মাতা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে। তাঁর অভ্যুত্থান ছিল ইতিহাসের গভীর থেকে উঠে আসা এক বাস্তবতার অনিবার্য ফলাফল। তিনি যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন দেশ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে ছিন্নভিন্ন, অর্থনীতিতে ধ্বংসপ্রাপ্ত, এবং জনগণের মনোবলে চরম হতাশাগ্রস্ত। ঠিক এই প্রেক্ষাপটে তিনি যে দর্শন নির্মাণ করেন, তা ছিল আত্মনির্ভরতার, শৃঙ্খলার এবং সর্বোপরি, গণভিত্তিক রাষ্ট্রচিন্তার এক নতুন খসড়া। জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক চিন্তার কেন্দ্রে ছিল বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, একটি তাত্ত্বিক ও বাস্তবভিত্তিক ধারণা, যা একদিকে জাতীয় ভূখন্ডের প্রতি আনুগত্যকে প্রধান করে, অন্যদিকে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে রাষ্ট্রচিন্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। এটি ছিল পাকিস্তানি ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ ও ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষ ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ-এর বাইরে একটি স্বতন্ত্র দর্শন। শহীদ জিয়া বিশ্বাস করতেন, রাজনৈতিক সফলতার মাপকাঠি কেবল গণতন্ত্রের আবরণ নয়, বরং এর মূলে থাকা উচিত উৎপাদনশীলতা, কর্মনিষ্ঠা ও শৃঙ্খলা। তাঁর শাসনামলে কর্মই শ্রেষ্ঠ এই বার্তা তিনি শুধু ভাষণে নয়, নীতিতে বাস্তবায়িত করেছিলেন। তিনি ব্যক্তির চেয়ে দল আর দলের চেয়ে দেশকে বড় করে দেখেছিলেন। তিনি প্রশাসনিক কাঠামো ঢেলে সাজান, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালু করেন, গ্রাম পর্যায়ে কৃষি উন্নয়ন জোরদার করেন, এবং স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার রূপরেখা তৈরি করেন। তরুণরা আজ যখন কর্মসংস্থান ও ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়ে দোলাচলে, তখন জিয়াউর রহমানের কর্মমুখী চিন্তাধারা আবারও আলোচনায় আসা উচিত, যেখানে রাজনীতি আর শাসন কেবল প্রতিশ্রুতি নয়, বরং কার্যকর বাস্তবায়নের শৃঙ্খলিত রূপরেখা। শেখ মুজিবের অপশাসনের প্রেক্ষাপটে ১৯৭৫ সালে দেশে যখন একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিল, ঠিক সেই সময় শহীদ জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক বহুত্ববাদ ও মুক্ত মত প্রকাশের পরিবেশ ফিরিয়ে আনেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন, নিষিদ্ধ দলসমূহকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনেন এবং একটি তৃণমূলমুখী রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি করেন। তাঁর সময়েই বিএনপিতে বহু তরুণ, পেশাজীবী, শিক্ষক ও উদ্যোক্তা সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হন। এমনকি তাঁর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক দর্শনেও যুবশক্তি ছিল এক অন্যতম প্রধান নির্ধারক শক্তি। তিনি তরুণদের বলেছিলেন দেশ গড়ার হাতিয়ার এখনই তুলে নিতে হবে, বয়স নয়, দায়বদ্ধতাই নেতৃত্বের যোগ্যতা। আজকের তরুণদের সামনে যখন রাজনীতি বিভক্ত, নেতৃত্ব সংকটে, আদর্শ বিলুপ্তির পথে তখন শহীদ জিয়ার চিন্তাকে নতুনভাবে পাঠ করা প্রয়োজন।
লেখক: নাসির উদ্দিন বিপ্লব (হায়দার‌), ফটিকছড়ি উপজেলা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি

দাঁতমারায় রাজনৈতিক দলবদলে বিতর্ক: মাদক ব্যবসায়ীরা এখন বিএনপির নেতা!

শহীদ জিয়ার বহুদলীয় গণতন্ত্র তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক দর্শন

আপডেট: ০২:৩২:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

নাসির উদ্দিন বিপ্লব (হায়দার‌) : দেশজুড়ে চলা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর গণহত্যা এবং রাজনৈতিক শূন্যতার মাঝে স্বাধীনতার ঘোষণাই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে উদ্দীপ্ত করেছিল বাংলাদেশের মানুষকে। মেজর জিয়ার মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততার বিষয়টি জানতে পারে দিশেহারা জাতি এবং নতুন করে আশায় বুক বেঁধে একতায় সংহত হতে উদ্বুদ্ধ হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের নিয়মিত সেনাবাহিনী গঠিত হওয়ার পর এর অন্যতম ব্রিগেড ‘জেড ফোর্স’র প্রধান হিসেবে ক্ষণজন্মা মেজর জিয়াউর রহমান নিজের সাহসিকতা ও সততায় মুগ্ধ করেছিলেন সবাইকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধে অবদানের কারণে তাকে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেয়া হয়। ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর, তৎকালীন রাজনীতি ও সেনাবাহিনীতে নানা অঘটন এবং চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে সিপাহি জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে ১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় আসেন জেনারেল জিয়া। বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা করেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। তার শাসনামলে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন আনার মধ্য দিয়ে গণমানুষের নেতা হয়ে ওঠেন জিয়া। যারা বাংলাদেশের ইতিহাসকে শুধু পৃষ্ঠা নয় স্পন্দনের মত পড়ে থাকেন, তাঁদের কাছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের (বীরউত্তম) নামটি এক অনিবার্য উচ্চারণ। ১৯৭৫-এর উত্তাল রাজনৈতিক পটভূমিতে জিয়াউর রহমান আবির্ভূত হন এক নির্মাতা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে। তাঁর অভ্যুত্থান ছিল ইতিহাসের গভীর থেকে উঠে আসা এক বাস্তবতার অনিবার্য ফলাফল। তিনি যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন দেশ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে ছিন্নভিন্ন, অর্থনীতিতে ধ্বংসপ্রাপ্ত, এবং জনগণের মনোবলে চরম হতাশাগ্রস্ত। ঠিক এই প্রেক্ষাপটে তিনি যে দর্শন নির্মাণ করেন, তা ছিল আত্মনির্ভরতার, শৃঙ্খলার এবং সর্বোপরি, গণভিত্তিক রাষ্ট্রচিন্তার এক নতুন খসড়া। জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক চিন্তার কেন্দ্রে ছিল বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, একটি তাত্ত্বিক ও বাস্তবভিত্তিক ধারণা, যা একদিকে জাতীয় ভূখন্ডের প্রতি আনুগত্যকে প্রধান করে, অন্যদিকে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে রাষ্ট্রচিন্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। এটি ছিল পাকিস্তানি ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ ও ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষ ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ-এর বাইরে একটি স্বতন্ত্র দর্শন। শহীদ জিয়া বিশ্বাস করতেন, রাজনৈতিক সফলতার মাপকাঠি কেবল গণতন্ত্রের আবরণ নয়, বরং এর মূলে থাকা উচিত উৎপাদনশীলতা, কর্মনিষ্ঠা ও শৃঙ্খলা। তাঁর শাসনামলে কর্মই শ্রেষ্ঠ এই বার্তা তিনি শুধু ভাষণে নয়, নীতিতে বাস্তবায়িত করেছিলেন। তিনি ব্যক্তির চেয়ে দল আর দলের চেয়ে দেশকে বড় করে দেখেছিলেন। তিনি প্রশাসনিক কাঠামো ঢেলে সাজান, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালু করেন, গ্রাম পর্যায়ে কৃষি উন্নয়ন জোরদার করেন, এবং স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার রূপরেখা তৈরি করেন। তরুণরা আজ যখন কর্মসংস্থান ও ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়ে দোলাচলে, তখন জিয়াউর রহমানের কর্মমুখী চিন্তাধারা আবারও আলোচনায় আসা উচিত, যেখানে রাজনীতি আর শাসন কেবল প্রতিশ্রুতি নয়, বরং কার্যকর বাস্তবায়নের শৃঙ্খলিত রূপরেখা। শেখ মুজিবের অপশাসনের প্রেক্ষাপটে ১৯৭৫ সালে দেশে যখন একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিল, ঠিক সেই সময় শহীদ জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক বহুত্ববাদ ও মুক্ত মত প্রকাশের পরিবেশ ফিরিয়ে আনেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন, নিষিদ্ধ দলসমূহকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনেন এবং একটি তৃণমূলমুখী রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি করেন। তাঁর সময়েই বিএনপিতে বহু তরুণ, পেশাজীবী, শিক্ষক ও উদ্যোক্তা সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হন। এমনকি তাঁর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক দর্শনেও যুবশক্তি ছিল এক অন্যতম প্রধান নির্ধারক শক্তি। তিনি তরুণদের বলেছিলেন দেশ গড়ার হাতিয়ার এখনই তুলে নিতে হবে, বয়স নয়, দায়বদ্ধতাই নেতৃত্বের যোগ্যতা। আজকের তরুণদের সামনে যখন রাজনীতি বিভক্ত, নেতৃত্ব সংকটে, আদর্শ বিলুপ্তির পথে তখন শহীদ জিয়ার চিন্তাকে নতুনভাবে পাঠ করা প্রয়োজন।
লেখক: নাসির উদ্দিন বিপ্লব (হায়দার‌), ফটিকছড়ি উপজেলা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি